শিশুর অসুস্থতা কোনো বাবা-মা মেনে নিতে পারবেন না এটাই স্বাভাবিক। তবে জন্মের প্রথম কয়েক বছরে কিছু অসুস্থতা এতোটাই স্বাভাবিক যে এগুলোকে শিশুদের জন্য এক প্রকার রুটিন মাফিক অসুখই বলা যেতে পারে। এ লেখায় বর্ণিত উপসর্গগুলো জন্মের প্রথম দুই বছরের মাঝে হয়তো আপনার শিশুর মাঝে দেখবেন। শিশুর অসুস্থতা লাঘব করবার জন্য উপায়গুলোও এজন্য জেনে নেওয়া প্রয়োজন। ঠান্ডা লাগাঃপ্রথমদিকে একরকম নিশ্চিতভাবেই আপনার শিশুর ঠান্ডা-জ্বর হবে। আপনার শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরোপুরি তৈরী হওয়ার আগ পর্যন্ত চারদিকের হাজারো রকমের জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে। তবে একটি নবজাতক শিশুর জন্মের প্রথম ৬ সপ্তাহের মাঝে এ ধরণের সংক্রমণ সাধারণত দেখা যায় না। অনেক সময় সদ্যোজাত শিশুদের শ্বাস প্রশ্বাসের পথ পরিষ্কার করবার জন্য হাঁচি-কাশি দিতে দেখা যায়, এর মানে এমন নয় যে শিশুর ঠান্ডা লেগে গিয়েছে। যে কারণেই হোক, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া শিশুকে ঠান্ডার জন্য ওষুধ খাওয়ানো উচিত নয়। শিশুর ঠান্ডা লেগেছে, নাকি এলার্জি হচ্ছে বা গুরুতর কোনো সমস্যা হয়েছে সেটা নির্ণয় করা একটু ঝামেলার। সাধারণত ঠান্ডা লাগলে শিশুর নাক থেকে পানি পড়বে, হাঁচি বা কাশি দেবে, হাল্কা জ্বর থাকবে এবং মেজাজ খারাপ থাকতে দেখা যাবে।
ডায়রিয়াঃ ডায়রিয়া হলে শিশুর ঘনঘন, বদ গন্ধযুক্ত পাতলা পায়খানা হবে। ৩ মাস বা তার থেকে কম বয়সী শিশুর যদি পাতলা পায়খানার সাথে ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপর তাপমাত্রা থাকে এবং খেতে না চায় তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। জন্ডিসঃ জন্ডিস হলে শিশুর চামড়া ও চোখের সাদা অংশে হলুদ ভাব দেখা যাবে। এই হলুদ বস্তুটির নাম বিলিরুবিন এবং সদ্যোজাত শিশুর রক্তে অতিরিক্ত বিলিরুবিনের উপস্থিতিকে হাইপারবিলিরুবিনিয়া নামে ডাকা হয়। শিশুর জন্মের ৫ দিনের মাথায় সাধারণত জন্ডিসের লক্ষণ দেখা যায়। কোনো সমস্যা ছাড়াই এক বা দুই সপ্তাহের মাঝে তা উপশমও হয়ে যায়। তবে জন্ডিসকে হাল্কাভাবে নেওয়ার কিছু নেই কারণ শিশুর রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেশি থাকার পরও যদি উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া না হয় সেক্ষেত্রে ব্রেইনে ক্ষতি হতে পারে। (গুরুতর জন্ডিসের কারণে ব্রেইনে যে ক্ষতি হয় তাকে কার্নিকটেরাস বলা হয়।)বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদের শারীরিক জন্ডিস হয়। এর অর্থ হলো, রক্তে অতিরিক্ত বিলিরুবিন পরিষ্কার করার জন্য শিশুর শরীর এখনো প্রস্তুত হয়নি। জন্মের পরপর শিশুর শরীর থেকে এই অতিরিক্ত বিলিরুবিন পরিষ্কার করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো অস্বাভাবিক উপক্রম দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্যঃ প্রত্যেক শিশুরই পায়খানা করার সময় এবং ধরণ আলাদা, কাজেই আপনারই বুঝতে হবে আপনার শিশুর জন্য কোনটা স্বাভাবিক। এটা বোঝার বেশ কিছু উপায় আছে। যেসব শিশু মায়ের বুকের দুধ পান করে তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম, কারণ বুকের দুধ খুবই সহজপাচ্য এবং এই কারণে শিশুদের পায়খানা সাধারণত নরম হয়ে থাকে। এদিক থেকে বোতলের দুধ খাওয়া শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সম্ভাবনা বেশি কারণ ফর্মুলা দুধ অতোটা সহজপাচ্য নয়, এক্ষেত্রে শিশুর পায়খানাও শক্ত হয়ে থাকে। বমিঃসব শিশুই নিয়মিত বমি করে। বমির বেগ দেখে শিশুর সুস্থতার মাত্রাটা বুঝতে হবে। ঘনঘন বমি না হলে এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। অতিরিক্ত খাওয়ানোর জন্য বমি হতে পারে, আবার কোনো অসুস্থতার (কানের সংক্রমণ, মুত্রনালীতে সংক্রমণ) কারণেও বমি হতে পারে। সাধারণত ২-৩ মাসের বেশি বয়সী শিশুদের অতোটা বমি করতে দেখা যায় না। মাড়ির ঘাঃশিশুদের মাড়িতে এবং মুখের ভেতরদিকে হলদেটে বা সাদা রঙের ইস্টের সংক্রমণের কারণে ঘা হতে পারে। সাধারণত এই উপসর্গ জন্মের পর থেকে ২ মাসের কম বয়সী শিশুদের মাঝে বেশি দেখা যায়। ডায়পারের আশেপাশেও এ ধরনের সংক্রমণ দেখা যায়। শিশুদের অবশ্য এই সংক্রমণের কারণে কোনো গুরুতর সমস্যা হয় না। তবে আপনার যদি মনে হয় আপনার শিশুর এ ধরনের সংক্রমণ হয়েছে তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাঃশ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা শিশুদের জন্য বেশ গুরুতর। এ সমস্যায় আক্রান্ত হলে শিশুকে জোরে জোরে শ্বাস নিতে দেখবেন এবং বুকের একটা অংশে চাপ পড়বে। এরকম লক্ষণ দেখলে সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কলিকঃশিশু কোনো কারণ ছাড়াই কান্না করলে এটাকে ‘কলিক’ বলা হয়ে থাকে। ৩ মাসের বেশি বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে সাধারণত এই সমস্যা দেখা যায় না। আপনার শিশু যদি দিনরাত কাঁদতে থাকে এবং কোনোভাবেই তাকে থামানো না যায়, তবে বুঝতে হবে অন্য কোনো গুরুতর সমস্যা হয়েছে। এক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
ডায়পার ডার্মাটাইটিসঃ জন্মের প্রথম বছরে শতকরা ৩৫ ভাগ শিশুরই ডায়পারের ঘা হয়ে থাকে। বিশেষ করে ৯-১২ মাসের শিশুদের ক্ষেত্রে এ সমস্যাটা বেশি দেখা যায়। ঘা হলে শিশুর কোমল ত্বক রুক্ষ ও লাল হয়ে যায়। নোংরা ডায়পারে শিশুকে দীর্ঘক্ষণ রেখে দিলে এ সমস্যা হবে। তবে শিশুর সংবেদনশীল ত্বকের কারণে যেকোনো শিশুরই এ ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সবচেয়ে ভালো ডায়পারও শিশুর প্রস্রাব পুরোপুরি শুষে নিতে পারে না।